ইয়োব 7

1 “এই পৃথিবীতে মানুষকে কঠিন পরিশ্রম করতে হয়,

সে মজুরের মত দিন কাটায়।

2 দাস যেমন সন্ধ্যাবেলার জন্য অপেক্ষা করে,

মজুর যেমন তার মজুরির জন্য আশা করে থাকে,

3 তেমনি করেই মাসের পর মাস নিষ্ফলতা আমার ভাগে পড়েছে;

আমি রাতের পর রাত কেবল দুঃখ পেয়েছি।

4 শোবার সময় আমি ভাবি, আমি কখন উঠব?

কিন্তু রাত বড় হয়, আর আমি সকাল পর্যন্ত এপাশ-ওপাশ করি।

5 পোকা আর ঘায়ের মাম্‌ড়িতে আমার দেহ ঢাকা পড়েছে;

আমার চামড়া ফেটে গেছে এবং পুজঁ পড়ছে।

6 আমার দিনগুলো তাঁতীর মাকুর চেয়েও তাড়াতাড়ি চলছে;

কোন আশা ছাড়াই সেগুলো শেষ হয়ে যাচেছ।

7 “হে ঈশ্বর, মনে রেখ, আমার জীবন

একটা নিঃশ্বাস ছাড়া আর কিছু নয়;

আমি তো আর সুখের মুখ দেখব না।

8 তোমার চোখ আর আমাকে দেখবে না;

তুমি আমার খোঁজ করবে, কিন্তু আমি আর থাকব না।

9 মেঘ যেমন অদৃশ্য হয়ে চলে যায়,

তেমনি যে মৃতস্থানে যায় সে আর ফিরে আসে না।

10 সে তার বাড়ীতে আর ফিরে আসবে না;

তার জায়গাও তাকে আর মনে রাখবে না।

11 “কাজেই আমি আর চুপ করে থাকব না।

আমার মনের দারুণ ব্যথায় আমি কথা বলব;

আমার তেতো প্রাণে আমি তোমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করব।

12 আমি কি সমুদ্র নাকি সাগরের জল-দানব যে,

তুমি আমাকে পাহারা দিয়ে রেখেছ?

13 যখন ভাবি আমার বিছানা আমাকে সান্ত্বনা দেবে

আর আমার ঘুম আমার দুঃখ কমাবে,

14 তখন তুমি নানা স্বপ্ন দেখিয়ে আমাকে ভয় দেখাও,

নানা দর্শন দিয়ে আমাকে ভীষণ ভয় ধরিয়ে দাও।

15 তাতে এই কংকাল শরীরে বেঁচে থাকার চেয়ে

কেউ আমাকে শ্বাস বন্ধ করে মেরে ফেলুক তা-ই আমি চাই।

16 আমার প্রাণকে আমি ঘৃণা করি;

আমি তো চিরকাল বেঁচে থাকতে চাই না।

আমাকে ছেড়ে দাও;

আমার আয়ু তো ক্ষণস্থায়ী।

17 “মানুষ কি যে, তাকে তুমি এত দাম দাও,

আর তার প্রতি তুমি এত মনোযোগ দাও,

18 প্রতিদিন সকালে তুমি তার খোঁজ নাও,

আর প্রতি মুহূর্তে তাকে তুমি পরীক্ষা কর?

19 আমার দিক থেকে কি তোমার চোখ ফিরাবে না,

কিম্বা ঢোক গিলতেও কি আমাকে সময় দেবে না?

20 হে মানুষের পাহারাদার, আমি যদি পাপ করেই থাকি

তবে তাতে তোমার কি?

তুমি কেন আমাকে তোমার তীরের লক্ষ্যস্থান করেছ?

আমি কি তোমার বোঝা হয়েছি?

21 কেন তুমি আমার দোষ ও আমার পাপ ক্ষমা কর না?

কারণ আমাকে তো শীঘ্রই মাটিতে শুতে হবে;

তুমি আমার খোঁজ করবে, কিন্তু আমি থাকব না।”