শৌল ও যোনাথনের মৃত্যুর খবর
1 শৌলের মৃত্যুর পর দায়ূদ অমালেকীয়দের হারিয়ে দিয়ে সিক্লগে ফিরে আসলেন এবং সেখানে দু’দিন রইলেন।
2 তৃতীয় দিনে শৌলের সৈন্য-ছাউনি থেকে একজন লোক দায়ূদের কাছে আসল। শোকের চিহ্ন হিসাবে তার গায়ের কাপড়-চোপড় ছেঁড়া ছিল এবং মাথায় ধুলা ছিল। সে দায়ূদের কাছে গিয়ে মাটিতে পড়ে তাঁকে প্রণাম করল।
3 দায়ূদ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কোথা থেকে এসেছ?”
সে বলল, “আমি ইস্রায়েলীয়দের ছাউনি থেকে পালিয়ে এসেছি।”
4 দায়ূদ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কি হয়েছে? আমাকে বল।”
সে বলল, “লোকেরা যুদ্ধের জায়গা থেকে পালিয়ে গেছে। অনেকে মারা গেছে আর শৌল ও তাঁর ছেলে যোনাথনও মারা গেছেন।”
5 যে যুবকটি এই খবর এনেছিল দায়ূদ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি করে জানলে যে, শৌল ও তাঁর ছেলে যোনাথন মারা গেছেন?”
6 যুবকটি তাঁকে বলল, “আমি সেই সময় গিল্বোয় পাহাড়ে ছিলাম আর শৌল তখন তাঁর বর্শার উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই সময় রথ এবং ঘোড়সওয়ারেরা প্রায় তাঁর উপর এসে পড়েছিল।
7 তিনি পিছন ফিরে আমাকে দেখতে পেয়ে ডাক দিলেন। আমি বললাম, ‘এই তো আমি।’
8 তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি কে?’ উত্তরে আমি বললাম, ‘আমি একজন অমালেকীয়।’
9 তিনি আমাকে বললেন, ‘দয়া করে আমার কাছে এসে আমাকে মেরে ফেল, কারণ আমার ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে কিন্তু আমি এখনও বেঁচে আছি।’
10 কাজেই আমি তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে মেরে ফেললাম। আমি বুঝতে পারলাম যে, তাঁর যে অবস্থা তাতে তিনি আর বাঁচবেন না। আমি তাঁর মাথার মুকুট ও তাঁর হাতের বাজু খুলে এখানে আমার প্রভু আপনার কাছে নিয়ে আসলাম।”
11 এই কথা শুনে দায়ূদ ও তাঁর সংগের লোকেরা নিজেদের কাপড় ছিঁড়লেন।
12 শৌল ও তাঁর ছেলে যোনাথন এবং সদাপ্রভুর সৈন্যদলের যে সমস্ত ইস্রায়েলীয় যুদ্ধে মারা গেছেন তাঁদের জন্য তাঁরা সন্ধ্যা পর্যন্ত কাঁদতে ও শোক করতে লাগলেন এবং কিছুই খেলেন না।
13 যে যুবকটি এই খবর এনেছিল দায়ূদ তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কোথাকার লোক?”
উত্তরে সে বলল, “আমি এই দেশে বাসকারী একজন বিদেশী লোকের ছেলে, একজন অমালেকীয়।”
14 দায়ূদ তাকে বললেন, “সদাপ্রভুর অভিষেক করা লোককে মেরে ফেলবার জন্য হাত তুলতে তোমার কি একটুও ভয় হল না?”
15 দায়ূদ তাঁর একজন লোককে ডেকে বললেন, “তুমি কাছে গিয়ে ওকে মেরে ফেল।” এতে সে তাকে মেরে ফেলল।
16 দায়ূদ সেই যুবকটিকে বলেছিলেন, “তোমার মৃত্যুর জন্য তুমি নিজেই দায়ী, কারণ তোমার মুখের কথাই তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে যে, সদাপ্রভুর অভিষেক করা লোককে তুমি মেরে ফেলেছ।”
শৌল ও যোনাথনের মৃত্যুতে দায়ূদের শোক
17 শৌল ও তাঁর ছেলে যোনাথনের জন্য দায়ূদ তখন এই বিলাপের গানটা গাইতে লাগলেন।
18 তিনি আদেশ দিলেন যেন ধনুক নামে এই বিলাপের গানটা যিহূদা-গোষ্ঠীর লোকদের শিখানো হয়। এই গান যাশের নামে একটা বইতে লেখা রয়েছে।
19 “হে ইস্রায়েল,
যাঁরা তোমার গৌরব
তাঁরা তোমার ঐ উঁচু জায়গায়
মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন।
হায়, কিভাবে বীরেরা ধ্বংস হয়ে গেলেন!
20 তোমরা গাতে এই খবর দিয়ো না,
আর অস্কিলোনের পথে পথে
ঘোষণা কোরো না;
তা করলে পলেষ্টীয়দের মেয়েরা
আনন্দ করবে,
ঐ সুন্নত-না-করানো লোকদের মেয়েরা
আমোদ করবে।
21 ওহে গিল্বোয়ের পাহাড়শ্রেণী,
তোমাদের উপর শিশির বা বৃষ্টি না পড়ুক,
তোমাদের মধ্যে উর্বর শস্যক্ষেতও
না থাকুক;
কারণ ওখানেই তো বীরদের ঢাল
অসম্মানিত হয়েছে,
শৌলের ঢালে আর তেল মাখানো
হচ্ছে না।
22 নিহত লোকদের রক্ত
আর বীরদের মাংস না পেলে
যোনাথনের ধনুক ফিরে আসত না;
তৃপ্ত না হয়ে শৌলের তলোয়ার
ফিরে আসত না।
23 বেঁচে থাকাকালে শৌল আর যোনাথন
প্রিয় ও ভাল ছিলেন;
তাঁরা মরণেও আলাদা হলেন না।
তাঁদের গতি ছিল
ঈগল পাখীর চেয়েও বেশী,
আর শক্তিও ছিল সিংহের চেয়ে অনেক।
24 হে ইস্রায়েলের মেয়েরা,
শৌলের জন্য কাঁদ।
তিনি তোমাদের দামী
লাল কাপড় পরিয়েছেন,
তোমাদের কাপড়ের উপর
সোনার কারুকাজ করেছেন।
25 হায়, সেই বীরেরা যুদ্ধের মধ্যে
কিভাবে ধ্বংস হয়ে গেলেন!
ঐ উঁচু জায়গায় যোনাথন মৃত অবস্থায়
পড়ে রয়েছেন।
26 হায় যোনাথন, আমার ভাই!
তোমার জন্য আমার বড় দুঃখ।
আমার কাছে তুমি কত প্রিয়;
আমার জন্য তোমার ভালবাসা ছিল
মেয়েদের প্রতি ভালবাসার
চেয়েও চমৎকার।
27 হায়, কিভাবে বীরেরা ধ্বংস হয়ে গেলেন,
আর নষ্ট হয়ে গেল তাঁদের যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র!”