গরীব বিধবার দান
1 এর পরে যীশু চেয়ে দেখলেন, ধনী লোকেরা উপাসনা-ঘরের দানের বাক্সে তাদের দান রাখছে।
2 তিনি দেখলেন, একজন গরীব বিধবা এসে দু’টা পয়সা রাখল।
3 তখন যীশু তাঁর শিষ্যদের বললেন, “আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, এই গরীব বিধবা অন্য সকলের চেয়ে অনেক বেশী রাখল,
4 কারণ অন্যেরা সবাই তাদের প্রচুর ধন থেকে দান করেছে, কিন্তু এই স্ত্রীলোকটির অভাব থাকলেও বেঁচে থাকবার জন্য তার যা ছিল সমস্তই দিয়ে দিল।”
যুগের শেষের দিনগুলো
5 শিষ্যদের মধ্যে কয়েকজন উপাসনা-ঘরের বিষয়ে আলোচনা করছিলেন। তাঁরা বলছিলেন, সুন্দর সুন্দর পাথর ও দানের জিনিস দিয়ে দালানটা কেমন সাজানো হয়েছে। তখন যীশু বললেন,
6 “তোমরা তো এই সব দেখছ, কিন্তু এমন দিন আসবে যখন এর একটা পাথরের উপরে আর একটা পাথর থাকবে না; সমস্তই ভেংগে ফেলা হবে।”
7 শিষ্যেরা যীশুকে জিজ্ঞাসা করলেন, “গুরু, কখন এই সব হবে এবং কোন্ চিহ্ন দেখে আমরা বুঝতে পারব যে, এই সব ঘটবার সময় এসেছে?”
8 উত্তরে যীশু বললেন, “দেখো, কেউ যেন তোমাদের না ঠকায়, কারণ অনেকে আমার নাম নিয়ে এসে বলবে, ‘আমিই মশীহ’ এবং ‘সময় কাছে এসেছে।’ তাদের পিছনে যেয়ো না।
9 তোমরা যখন যুদ্ধের ও বিদ্রোহের খবর শুনবে তখন ভয় পেয়ো না, কারণ প্রথমে এই সব হবেই; কিন্তু তখনই যে শেষ সময় আসবে তা নয়।”
10 তারপর যীশু তাঁদের বললেন, “এক জাতি আর এক জাতির বিরুদ্ধে এবং এক রাজ্য অন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
11 ভীষণ ভূমিকম্প হবে এবং ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও মড়ক হবে। এছাড়া আকাশে এমন সব ঘটনা ঘটবে ও চিহ্ন দেখা যাবে যা ভীষণ ও ভয়ংকর।
12 “এই সব হবার আগে লোকেরা তোমাদের ধরবে এবং তোমাদের উপর অত্যাচার করবে। বিচারের জন্য তারা তোমাদের সমাজ-ঘরে নিয়ে যাবে এবং জেলে দেবে। আমার জন্য রাজাদের ও শাসনকর্তাদের সামনে তোমাদের নেওয়া হবে,
13 আর তাতে আমার সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবার জন্য তোমাদের সুযোগ হবে।
14 তোমরা এখনই মনে মনে ঠিক করে ফেল, তখন নিজের পক্ষে কথা বলবার জন্য তোমরা আগে থেকে তৈরী হবে না,
15 কারণ আমি তোমাদের এমন কথা ও এমন জ্ঞান যুগিয়ে দেব যার উত্তরে তোমাদের শত্রুরা কিছু বলতেও পারবে না এবং তা অস্বীকারও করতে পারবে না।
16 তোমাদের মা-বাবা, ভাই-বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনেরা তোমাদের ধরিয়ে দেবে। তারা তোমাদের কাউকে কাউকে মেরেও ফেলবে।
17 আমার জন্য সবাই তোমাদের ঘৃণা করবে,
18 কিন্তু কোনমতেই তোমাদের একটা চুলও ধ্বংস হবে না।
19 তোমরা স্থির থাকলে তোমাদের সত্যিকারের জীবন পূর্ণতা লাভ করবে।
20 “যখন তোমরা দেখবে যিরূশালেমকে সৈন্যেরা ঘেরাও করেছে তখন বুঝবে যে, যিরূশালেমের ধ্বংস হবার সময় কাছে এসেছে।
21 সেই সময় যারা যিহূদিয়াতে থাকবে তারা পাহাড়ী এলাকায় পালিয়ে যাক। যারা শহরের মধ্যে থাকবে তারা শহরের বাইরে চলে যাক। যারা গ্রামের দিকে থাকবে তারা কোনমতেই শহরে না আসুক,
22 কারণ এই দিনগুলো হবে শাস্তির দিন, আর এতে পবিত্র শাস্ত্রে যা লেখা আছে তা পূর্ণ হবে।
23 তখন যারা গর্ভবতী আর যারা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ায় তাদের অবস্থা কি ভীষণই না হবে! দেশে ভীষণ কষ্ট উপস্থিত হবে এবং যিহূদী লোকদের উপরে ঈশ্বরের শাস্তি নেমে আসবে।
24 তলোয়ার দিয়ে তাদের মেরে ফেলা হবে এবং সমস্ত জাতির মধ্যে তারা বন্দী হিসাবে ছড়িয়ে থাকবে। যতদিন না অযিহূদীদের সময় পূর্ণ হয় ততদিন পর্যন্ত অযিহূদীরা যিরূশালেমকে তাদের পায়ের নীচে মাড়াতে থাকবে।
25 “তখন সূর্য, চাঁদ ও তারাগুলোর মধ্যে অনেক চিহ্ন দেখা যাবে। পৃথিবীতে সমস্ত জাতি কষ্ট পাবে এবং সমুদ্রের গর্জন ও ঢেউয়ের জন্য তারা ভীষণ অস্থির হয়ে উঠবে।
26 জগতে কি আসছে ভেবে ভয়ে লোকে অজ্ঞান হয়ে পড়বে, কারণ চাঁদ-সূর্য-তারা ইত্যাদি আর স্থির থাকবে না।
27 সেই সময় মহাশক্তি ও মহিমার সংগে মনুষ্যপুত্রকে তারা মেঘের মধ্যে আসতে দেখবে।
28 এই সব ঘটনা ঘটতে আরম্ভ করলে পর তোমরা উঠে দাঁড়ায়ো এবং মুখ তুলো, কারণ তোমাদের মুক্তির সময় কাছে এসেছে।”
29 এর পরে যীশু তাঁর শিষ্যদের শিক্ষা দেবার জন্য এই কথা বললেন, “ডুমুর গাছ ও অন্যান্য গাছগুলোকে লক্ষ্য কর।
30 পাতা বের হতে দেখলে পর তোমরা বুঝতে পার যে, গরমকাল কাছে এসেছে।
31 সেইভাবে যখন তোমরা এই সব ঘটতে দেখবে তখন বুঝতে পারবে যে, ঈশ্বরের রাজ্য কাছে এসে গেছে।
32 আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যখন এই সব হবে তখনও এই কালের কিছু লোক বেঁচে থাকবে।
33 আকাশ ও পৃথিবীর শেষ হবে, কিন্তু আমার কথা চিরদিন থাকবে।
34-35 “তোমরা সাবধান থেকো যেন তোমাদের অন্তর উচ্ছৃংখলতায়, মাতলামিতে ও সংসারের চিন্তার ভারে নুয়ে না পড়ে। তা না হলে ফাঁদ যেমন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় তেমনি হঠাৎ সেই দিনটা তোমাদের উপরে, এমন কি, পৃথিবীর সব লোকের উপরে এসে পড়বে।
36 সজাগ থেকো এবং সব সময় প্রার্থনা কোরো যেন যা কিছু ঘটবে তা পার হয়ে যেতে এবং মনুষ্যপুত্রের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে তোমরা শক্তি পাও।”
37 সেই সময় যীশু প্রত্যেক দিনই উপাসনা-ঘরে শিক্ষা দিতেন, কিন্তু রাতের বেলা বাইরে গিয়ে জৈতুন পাহাড়ে থাকতেন।
38 সমস্ত লোক তাঁর কথা শুনবার জন্য খুব সকালেই উপাসনা-ঘরে উপস্থিত হত।
—https://d1b84921e69nmq.cloudfront.net/66/32k/LUK/21-5cbc65a951473fcc88a20edfe7213799.mp3?version_id=155—