ইয়োব 31

1 “কামনা নিয়ে কোন যুবতী মেয়ের দিকে তাকাব না বলে

আমার চোখের সংগে আমি একটা চুক্তি করেছি।

2 স্বর্গবাসী ঈশ্বরের কাছ থেকে মানুষ কি পায়?

স্বর্গের সর্বশক্তিমানের কাছে তার পাওনাই বা কি?

3 তা কি দুষ্টদের জন্য ধ্বংস নয়?

যারা মন্দ কাজ করে তাদের জন্য বিপদ নয়?

4 তিনি কি আমার চলাফেরা দেখেন না?

আমার প্রতিটি ধাপ কি তিনি গোণেন না?

5 “আমি সত্যিই বলছি যে, আমি মিথ্যার মধ্যে চলাফেরা করি নি,

আমার পা ছলনার পিছনে দৌড়ায় নি।

6 সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ঈশ্বর যেন আমাকে ওজন করেন,

তাহলে তিনি জানতে পারবেন যে, আমি নির্দোষ।

7 যদি আমি বিপথে পা দিয়ে থাকি,

আমার চোখ যদি আমার অন্তরকে পাপ করিয়ে থাকে,

কিম্বা আমার হাতে যদি কোন পাপের দাগ লেগে থাকে,

8 তবে আমি যা বুনেছি তা যেন অন্যেরা খায়,

আমার শস্য যেন উপ্‌ড়ে ফেলা হয়।

9 “আমার অন্তর যদি কোন স্ত্রীলোকের দিকে গিয়ে থাকে,

কিম্বা যদি প্রতিবেশীর দরজার কাছে আমি ওৎ পেতে থাকি,

10 তবে আমার স্ত্রী যেন অন্য লোকের যাঁতা ঘুরায়,

আর অন্য লোক যেন তার সংগে শোয়।

11 আমার পক্ষে তা হবে একটা জঘন্য কাজ,

বিচারকদের দ্বারা শাস্তি পাওয়ার মত পাপ।

12 সেই পাপ এমন আগুনের মত যা মৃতস্থান পর্যন্ত জ্বলছে,

তা আমার সব কিছু পুড়িয়ে ফেলতে পারে।

13 “আমার দাসদাসীরা আমার বিরুদ্ধে কোন নালিশ জানালে

যদি আমি তার বিচার করতে রাজী না হয়ে থাকি,

14 তবে ঈশ্বর যখন আমার মুখোমুখি হবেন

তখন আমি কি করব?

আমি তাঁকে কি কৈফিয়ৎ দেব?

15 যিনি আমাকে গর্ভের মধ্যে তৈরী করেছেন,

তিনি কি তাদেরও তৈরী করেন নি?

একই জন কি মায়ের গর্ভে আমাদের গড়েন নি?

16 “আমি যদি গরীবদের অভাব না মিটিয়ে থাকি,

কিম্বা বিধবাদের নিরাশ করে থাকি,

17 যদি আমার খাবার আমি অনাথদের না দিয়ে একা খেয়ে থাকি-

18 অবশ্য আমার অল্প বয়স থেকেই তাদের আমি বাবার মত পালন করেছি

আর আমার জন্মের পর থেকেই বিধবাদের দেখাশোনা করেছি-

19 যদি আমি কাউকে কাপড়-চোপড়ের অভাবে মরতে দেখে থাকি

কিম্বা অভাবী লোককে উলংগ দেখে থাকি,

20 ভেড়ার লোমের কাপড় দিয়ে তাকে গরমে রেখেছি বলে

যদি তার অন্তর আমাকে আশীর্বাদ না করে থাকে,

21 বিচার-সভায় আমার ক্ষমতা আছে বলে

আমি যদি অনাথদের গায়ে হাত তুলে থাকি,

22 তাহলে কাঁধ থেকে আমার হাত যেন খসে পড়ে,

হাড়ের জোড়া থেকে যেন তা ভেংগে পড়ে,

23 কারণ আমি ঈশ্বরের দেওয়া শাস্তির ভয় করি;

তাঁর মহিমা এত বেশী যে, তাঁর ভয়ে আমি ঐ সব করতে পারি না।

24 “সোনার উপর যদি আমি নির্ভর করে থাকি,

কিম্বা খাঁটি সোনাকে বলে থাকি, ‘তোমার উপরেই আমার নির্ভরতা,’

25 আমার নিজ হাত দিয়ে যে সম্পদ আমি লাভ করেছি

সেই মহাধন নিয়ে যদি আমি আনন্দ করে থাকি,

26 যদি উজ্জ্বল সূর্যের এবং জ্যোৎস্না-ভরা চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকি,

27 আর তাতে যদি আমার অন্তর গোপনে তাদের দিকে গিয়ে থাকে,

তাদের চুম্বন করবার উদ্দেশ্যে যদি আমার হাতে চুম্বন করে থাকি,

28 তাহলে এগুলোও হল শাস্তি পাবার মত পাপ,

কারণ তাতে আমি স্বর্গের ঈশ্বরকে অস্বীকার করেছি।

29 “আমার শত্র€র দুর্ভাগ্যে আমি আনন্দ করি নি

কিম্বা তার কষ্টের সময়ে খুশী হই নি।

30 তার প্রাণের বিরুদ্ধে অভিশাপের কথা বলে

আমার মুখকে আমি পাপ করতে দিই নি।

31 আমার ঘরের লোকেরা তো এই কথাই বলত,

‘ইয়োবের দেওয়া মাংসে কে না পেট ভরেছে?’

32 কোন বিদেশীকে রাস্তায় রাত কাটাতে হয় নি,

কারণ যাত্রীদের জন্য আমার দরজা সব সময় খোলা থাকত।

33 অন্যান্য মানুষের মত আমি পাপ গোপন করে রাখি নি

আর আমার অন্তরে দোষ লুকিয়ে রাখি নি;

34 কাজেই আমি লোকদের ভয় করতাম না,

আর আমার বংশের লোকদের ঘৃণার ভয়ে

আমি ঘরে চুপ করে বসে থাকতাম না।

35 “হায়, আমার কথা যদি কেউ শুনত!

আমি সই দিয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমার কথা সত্যি;

সর্বশক্তিমান যেন আমাকে উত্তর দেন,

আমার বিবাদী যেন আমার দোষ লিখে দেখান।

36 আমি নিশ্চয়ই তা আমার কাঁধে লাগিয়ে রাখব

আর মুকুটের মত করে মাথায় পরব।

37 আমার প্রতিটি ধাপের হিসাব আমি তাঁকে দেব;

রাজপুত্রের মত আমি তাঁর কাছে এগিয়ে যাব।

38 “আমার জমি যদি আমার বিরুদ্ধে চিৎকার করে ওঠে

আর চাষ করা জমি চোখের জলে ভিজে ওঠে,

39 যদি আমি দাম না দিয়ে তার ফসল খেয়ে থাকি

কিম্বা সেখানকার মালিকদের নিষ্ঠুরভাবে যন্ত্রণা দিয়ে থাকি,

40 তবে যেন সেখানে গমের বদলে কাঁটাগাছ গজায়

আর যবের বদলে জন্মায় আগাছা।”

এখানে ইয়োবের কথা শেষ হয়েছে।